তরুণদের মধ্যে ফেসবুকের জনপ্রিয়তা কমছে। কিন্তু আসলেই কী তাই? প্রযুক্তি বিশ্লেষকেদের মধ্যে অনেকেই ফেসবুকের জনপ্রিয়তা কমার বিষয়টিতে একমত নন। তাঁদের দাবি, ফেসবুকের জনপ্রিয়তা কমছে না বরং ফেসবুক ব্যবহারে পরিবর্তন এসেছে। ফেসবুক বদলে গেছে। টেলিগ্রাফ অনলাইনের প্রযুক্তি বিশ্লেষক রিহানন উইলিয়ামস এই বিষয়টি বিশ্লেষণ করেছেন।
টেলিগ্রাফ অনলাইনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কিছুদিন পরপরই ফেসবুক ব্যবহারের হার কমে যাওয়ার খবর শোনা যায়। এর মধ্যে একটি হচ্ছে প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের করা গবেষণা। এ বছরের শুরুর দিকে প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে দাবি করা হয়,শিগগিরই ফেসবুকের ৮০ শতাংশ ব্যবহারকারী কমে যাবে এবং ফেসবুক বন্ধ হয়ে যাবে। জুন মাসে প্রকাশিত ইউগভের আরেকটি প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রাইভেসি সচেতনতা, বিজ্ঞাপনের আধিক্য আর মানুষের আগ্রহ কমে যাওয়ার কারণেই টুইটার, ফেসবুকের জনপ্রিয়তা কমছে।
ফেসবুকের জনপ্রিয়তা হ্রাসের এ খবর শুনে ফেসবুক ব্যবহারকারীদের মধ্যে কেউ কী সাইটটির ব্যবহার ছেড়ে দিয়েছেন? সম্প্রতি গ্লোবাল ওয়েব ইনডেক্সের একটি প্রতিবেদনেও তরুণদের মধ্যে ফেসবুকের জনপ্রিয়তা কমে যাওয়ার তথ্য প্রকাশিত হয়েছে। ৩০টি অঞ্চলের এক লাখ ৭০ হাজার ইন্টারনেট ব্যবহারকারীকে নিয়ে গবেষণা করে তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে।
এই প্রতিবেদন ফেসবুকের জন্য নিশ্চয়ই খারাপ খবর দিচ্ছে। কিন্তু বিষয়টিকে অন্যভাবেও দেখা যায়। ফেসবুক সক্রিয় ব্যবহারকারীদের বেশির ভাগের গড় বয়স বেশি। ফেসবুকের সক্রিয় ব্যবহারকারীদের এক-চতুর্থাংশের বয়স ৪৫ বছরের ওপরে। তুলনামূলকভাবে টাম্বলার কিংবা ইনস্টাগ্রাম ব্যবহারকারীদের বয়স ১৬ থেকে ৩৪-এর মধ্যে। সাধারণত বয়স্ক ফেসবুক ব্যবহারকারীরা ফেসবুকে কম পোস্ট করেন। তাঁরা তরুণদের তুলনায় কম শেয়ার বা যোগাযোগ করেন। সেই বিবেচনায় ফেসবুকের যোগাযোগ হার কমে যাওয়া অস্বাভাবিক নয়। অবশ্য এর অর্থ এই নয় যে ফেসবুক মৃত্যুশয্যায়। আসলে ফেসবুকে যোগাযোগের হার কমলেও এখন আগের তুলনায় বেশি মানুষ এই সাইটে আসছেন, যা প্রতি মাসের হিসাবে নয় কোটি পর্যন্ত ছাড়িয়ে যাচ্ছে।
টেলিগ্রাফ-এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মানুষের ফেসবুক ব্যবহারের ধরন পাল্টেছে। এখন অনেকেই ফেসবুক ব্যবহার করছেন কিন্তু সেটা পরোক্ষভাবে। সক্রিয়ভাবে কোনো কিছু শেয়ার করার পরিবর্তে মানুষ এখন পরোক্ষভাবে সেটা পর্যবেক্ষণ করছেন বেশি। সবচেয়ে বড় কথা, সক্রিয় কোনো ফেসবুক ব্যবহারকারী মাত্রই জানেন যে তাঁর কোনো বন্ধুর ঘন ঘন স্ট্যাটাস দেওয়া, ছবি পোস্ট করা আর তা ট্যাগ করার বিষয়টি কতটা বিরক্তিকর!
এখন অনলাইনে মানুষের আচরণ বহুমুখী। নানা কারণে মানুষ এখন ভিন্ন ভিন্ন প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করছে। মানুষ এখন ছবি সম্পাদনা ও শেয়ারে ইনস্টাগ্রাম ব্যবহার করছে। হোয়াটসঅ্যাপ, স্ন্যাপচ্যাট কিংবা স্কাইপ ব্যবহার করে মানুষ যোগাযোগ করছে। কিন্তু তুলনা করলে দেখা যাবে ফেসবুক মেসেঞ্জার অ্যাপে এখন হোয়াটসঅ্যাপের চেয়ে বেশি ব্যবহারকারী।
ফেসবুক মূলত এখন সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান বা প্ল্যাটফর্ম হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছে। পুরোনো বন্ধুদের সঙ্গে যোগাযোগের পাশাপাশি ফেসবুক থেকে মানুষ এখন পণ্য কেনাবেচা করা, অর্থ লেনদেন করার কাজও করছে। ইনস্টাগ্রাম আর হোয়াটসঅ্যাপের জনপ্রিয়তা বাড়ছে কিন্তু এ ক্ষেত্রে আরেকটি বিষয় মাথায় রাখতে হবে, তা হচ্ছে এই দুটি অ্যাপের মালিক কোন প্রতিষ্ঠান। এর মালিকও ফেসবুক।
ফেসবুক এখন বিভিন্ন প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে তার উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছে। আরও বেশিসংখ্যক মানুষের কাছে পৌঁছাতে এবং মানুষের দৈনন্দিন জীবনে আরও গভীরভাবে ঢুকে যাওয়ার চেষ্টা করছে ফেসবুক। তাই বলা যায়, এখনই ফেসবুকের মৃত্যু ঘোষণা করার বিষয়টা বোধ হয় ঠিক হবে না।
Search This Blog
Tuesday, December 2, 2014
ফেসবুক কী টিকবে?
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment