দূর থেকে নিয়ন্ত্রিত ও চালকবিহীন উড়ন্ত যান (ড্রোন) ভবিষ্যতে আমাদের জীবনযাত্রায় বড় ধরনের প্রভাব বিস্তার করবে। মানুষের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ অনেক কাজকর্ম অনায়াসে করে দিতে পারবে ড্রোন বা রোবটযান। তবে মানুষের ফরমায়েশ অনুযায়ী বিভিন্ন জিনিসপত্র ঘরে ঘরে পৌঁছে দেওয়ার ব্যাপারটি বাস্তবে ঘটতে দেখার জন্য আরও অপেক্ষা করতে হবে।
ড্রোনের ব৵বহার বেশ সম্ভাবনাময় হলেও তা নিয়ে অনেক প্রশ্ন ও আইনি বিধিনিষেধ রয়েছে। ফ্রান্সের একটি পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্রের ওপর দিয়ে সম্প্রতি একাধিক ড্রোন উড়ে যায়। আর ড্রোনের কারণে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যে যাত্রীবাহী দুটি বিমান দুর্ঘটনায় পড়তে যাচ্ছিল। এতে ড্রোন নিয়ন্ত্রণে আরও বেশি মনোযোগী হওয়ার প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। ফলে ব্যাপক হারে ড্রোন ব্যবহারের অনুমোদন দেওয়ার ব্যাপারে সতর্ক হয়ে গেছে কর্তৃপক্ষ। ড্রোনের অবাধ ব্যবহারের কারণে মানুষের ব্যক্তিগত নিরাপত্তা লঙ্ঘনের ঝুঁকির যে আশঙ্কা রয়েছে, সে ব্যাপারেও সচেতনতা জরুরি।
বিভিন্ন শিল্পকারখানার উৎপাদন থেকে শুরু করে সেবামূলক কাজেও ড্রোন মানুষের সঙ্গী হবে। বিশেষজ্ঞরা এ রকম সম্ভাবনার কথা অনেক আগেই শুনিয়েছেন। সামরিক কর্মকাণ্ডের বাইরে ড্রোন ব্যবহারের বিভিন্ন খবর ২০১৪ সাল থেকে সংবাদমাধ্যমে গুরুত্ব পেতে থাকে। আর দৈনন্দিন জীবনযাত্রায় ড্রোনের ব্যবহার নিয়ে নানা সম্ভাবনার কথাও প্রচার করা হয়। ড্রোন প্রযুক্তিতে বর্তমানে সবচেয়ে এগিয়ে রয়েছে ফ্রান্স ও যুক্তরাষ্ট্র। শিল্পকারখানার জন্য ড্রোন নির্মাণকারী ফরাসি প্রতিষ্ঠান রেডবার্ডের প্রধান এমানুয়েল দো মেইস্ত্র বলেন, ড্রোন প্রযুক্তি এখনো অগ্রগতির পর্যায়ে রয়েছে। আর এটির চাহিদা দিন দিন বাড়ছে।
হালকা, মানিয়ে নেওয়ার উপযোগী এবং সহজে নিয়ন্ত্রণযোগ্য হওয়ায় ড্রোন ব্যবহারের মাধ্যমে অনেক সময় প্রচলিত হেলিকপ্টার, ছোটখাটো বিমান ও কৃত্রিম উপগ্রহের (স্যাটেলাইট) চেয়ে ভালোভাবে কাজ করা যায়। ফ্রান্সের আকাশ ও মহাকাশ অ্যাকাডেমি (এএই) জানায়, অন্যান্য উড়ন্ত যানের চেয়ে ড্রোন অধিকতর কার্যকর এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে বেশ সাশ্রয়ী।
উড়োজাহাজ চালনার প্রযুক্তির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে তৈরি করা হয়েছে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির ড্রোন। দো মেইস্ত্র বলেন, স্মার্টফোনে যেসব সুবিধা পাওয়া যায়, সেগুলো সবই একটি ড্রোনে পাওয়া যায়। গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন ঘটনার দৃশ্য ও খবর টেলিভিশনে সরাসরি প্রচারের কাজে ড্রোনের ব্যবহার বিশেষ কার্যকর হতে পারে। এতে করে দর্শকেরা নতুন ও বিস্ময়কর অবস্থান থেকে ক্যামেরার ধারণ করা ছবি দেখতে পাবেন।
কানাডায় সাংবাদিকতা শিক্ষার প্রতিষ্ঠানগুলো এখন ড্রোনের সাহায্যে টেলিভিশনের প্রতিবেদন তৈরির ওপর বিশেষ কোর্স পড়াচ্ছে। স্মার্টফোনের সহায়তায় নিয়ন্ত্রিত ড্রোনের সাহায্যে ব্যবহারের উপযোগী বিশেষ ধরনের ক্যামেরা তৈরির কাজও শুরু হয়েছে। এসব ক্যামেরায় সময়ের অতি ক্ষুদ্র অংশের মধ্যে ঘটে যাওয়া সূক্ষ্ম দৃশ্যও ধারণ করা সম্ভব হবে।
ড্রোন ব্যবহারের সুযোগ দিতে ফ্রান্সে ২০১২ সালে ইতিবাচক আইন প্রণয়ন করা হয়েছে। আর সে কারণেই দেশটিতে ড্রোন প্রযুক্তির বিশেষ সমৃদ্ধি ঘটেছে এবং রেডবার্ডের মতো প্রতিষ্ঠান এগিয়ে যাচ্ছে। ছোট ছোট অনেক প্রতিষ্ঠানও ড্রোন তৈরির কাজে যুক্ত হয়েছে। এ খাতে বর্তমানে দেশটিতে প্রায় তিন হাজার লোক কাজ করছেন। তবে যুক্তরাষ্ট্র এ ব্যাপারে এখনো কিছুটা সীমাবদ্ধতার মধ্যে রয়ে গেছে। আমাজনের প্রতিষ্ঠাতা জেফ বেজোস দাবি করেন, যুক্তরাষ্ট্রে ড্রোন ব্যবহারের ক্ষেত্রে প্রযুক্তি কোনো বাধা নয়। তবে আইনি সীমাবদ্ধতা আছে। ড্রোন ব্যবহারের সম্ভাবনা নিয়ে এখনো দেশটিতে অনেক গবেষণা ও যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে।
খনি ও রেল খাতের বড় বড় শিল্পপ্রতিষ্ঠান নিজেদের প্রয়োজনীয় যোগাযোগব্যবস্থার উন্নয়নে ড্রোন ব্যবহারের ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। কৃষি ক্ষেত্রে উন্নয়ন ও পরিবেশ রক্ষার কাজেও ড্রোন ব্যবহারের ইতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।
আমাজন, গুগল ও ফেসবুকের মতো প্রযুক্তিপ্রতিষ্ঠানগুলো বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহের কাজে ড্রোনকে কার্যকর উপাদান হিসেবে ব্যবহার করতে পারবে। তবে বাড়ি বাড়ি ড্রোনের সাহায্যে পণ্য পৌঁছে দেওয়ার ব্যাপারটি বাস্তবায়নে আরও সময় লাগবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
Search This Blog
Saturday, December 13, 2014
দৈনন্দিন জীবনে ড্রোনের ব্যবহার কবে শুরু হবে?
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment